খাদ্য ও ব্যাধি : জীবনচরিত ২

খাদ্য ও ব্যাধি : জীবনচরিত ২


"স্কুলে সবসময়েই মোটাদের তালিকায় আনাগোনা ছিলো। মাঝে মাঝে হয়ে উঠতাম বন্ধুদের হাসির খোরাক, বুঝতে না দিলেও নিজেরই নিজেকে অনেক অসুন্দর মনে হতো। আর মনে হতো এ কারণেই হয়তো ভালো একটা বন্ধুমহল আমার কখনোই হবে না। 

কলেজে আমার ওজন একটু কমলে, এটি আমাকে ডায়েট করতে খুবই উৎসাহিত করলো। কলেজের পরে আমি কখনোই ডায়েট ছাড়া ছিলাম বলে মনে পরে না। 

ভার্সিটিতে একটা নতুন জীবন শুরু হয়, তখনের আমার ওজন আর আগের ওজনের আকাশ পাতাল তফাত। আমার বন্ধুমহলে সবাই সবসময় বলতো যে আমি এত পারফেক্ট কি করে! তারা জানতো না যে আমি ডায়েট করি, আমি সবসময়েই তাদের বুঝাতাম যে,  আমি তাদের মতোই খাওয়াদাওয়া করি। এই কারণে আমি খাওয়ার পরেই ওয়াশরুমে যেয়ে যা খেতাম বমি করে ফেলতাম। একবার আমার ওজন ১ কেজি বেড়ে যাওয়াতে আমি সারা রাত এক্সারসাইজ করি আর এরপর খাওয়া দাওয়া আরো কমিয়ে দেই। কিছু খেলেই মনে হতো আমার ওজন বেড়ে যাবে আর কেউ আমাকে পছন্দ করবে না। বন্ধুদের সামনে খাওয়ার কারণে বমি করলেও আমার মনে হতো এতক্ষণে এটা আমার শরীরে কাজ করে ফেলেছে, তাই আমি রাতে খাওয়া বন্ধ করে দেই। খুব ক্ষুধা পেলে নিজের উপর খুব রাগ হতো, তাই যে ওষুধে আমার ক্ষুধা লাগবে না তা নেয়া শুরু করি। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা লেগেই থাকতো, আর না খাওয়ায় দিনদিন চেহারা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছিল, যেই দেখতো জিজ্ঞাসা করতো আমি অসুস্থ কিনা, আমি দেখতে খারাপ হয়ে যাচ্ছি এগুলো নিয়েও চিন্তিত হওয়া শুরু করি আর এদিকে না খেয়ে শরীর দুর্বল হচ্ছিল, মাথা ঘুরে অনেকবার পরেছি আর পেটে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া শুরু করলো। 



একদিন একজন ম্যাডাম আমাকে ডাকলেন আমার পড়াশোনার খারাপ অবস্থার জন্য, উনি আমাকে দেখে অসুস্থ ভেবে আমার গার্ডিয়ান কে জানান, তারা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার আমাকে একজন সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে বলেন। সেখানে আমি জানাই কিছু খেলেই ওজন বেড়ে যাবার ভয়ে থাকতাম আর খাওয়া হলে এতো বেশি খারাপ লাগা কাজ করতো যে এরচেয়ে না খেয়ে আমি অনেক ভালো থাকি। ওনার কাছে কয়েকটা সেশন করার পরে আমি অনেকটা স্বাভাবিক হই। 

পরবর্তীতে একজন নিউট্রিশনিস্টের সাহায্যে আমি স্বাস্থ্য সম্মত ডায়েট মেনে চলি। 

আমাকে আমার সেই ম্যাডাম গাইড না করলে আমার হয়তো আর খারাপ অবস্থা হতে পারতো তাই আমি সবসময়েই তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।"


'ইট টু বিট' এর বিশেষজ্ঞ মনোবিজ্ঞানীর একজন রোগীর জীবনের থেকে নেওয়া ঘটনাটি। আমাদের চারপাশে এমন ব্যক্তি, এমন ঘটনা আমরা প্রায়শই দেখতে পাই। অনেকেই এই ধরনের খাদ্যব্যাধিতে ভুগছেন। জ্ঞানত অথবা অজ্ঞতার বশে আমরা অনেকেই এই রোগটিকে অবহেলা করি, যা আমাদের শরীর ও মনে সুদূরপ্রসারি প্রভাব ফেলে যায়। তাই  এই রোগের ভয়াবহতা ও প্রতিকার জানানোর উদ্দেশ্যেই 'ইট টু বিট'। 

অবহেলা না করে জানুন খাদ্যব্যাধি নিয়ে।


#EattoBeat

#HealthPositivity

#Healthy_Panda

Comments